লিনা সরকার কনে বিদায়

কনে বিদায়

শীতকালের কুয়াশা মাখা সকাল, নব ঊষাকে অভ্যর্থনা জানাল পৃথিবী, এক নতুন দিনের যাত্রার সুচনা। এক নতুন দিনের আগমন, নতুন ভালোবাসার, নব প্রত্যাশার। বুকের মধ্যে ভরে নেই বিশুদ্ধ শীতল বাতাস, সারা শরীরে জেগে ওঠে এক নতুন দিগন্তের আশার আলো। বঙ্গালার গ্রাম, বাতাসে শিশির আর নতুন ঘাসের ঘ্রান ভেসে আসছে নাকে। সেই আঘ্রাণ আমার মনের গভীরে এক অনাবিল আনন্দের ছাপ ফেলে চলে যায়। বাড়ির লোকজন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। পরী আমায় ছেড়ে আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সুমন্ত মামা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি সারা রাত কোথায় ছিলাম। তার উত্তরে আমি জানিয়ে দিলাম যে আমি বিয়ের প্যান্ডালে সারা রাত বসে ছিলাম। আমার কথা শুনে হেসে বললেন যে মুখ হাত ধুতে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে কনে বিদায়ের পালা। নতুন বউ নিয়ে আমরা বসিরহাট ফিরে যাবো। আমি হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি চুপ করে, আমার পরীর দেখা নাই। ইতিমধ্যে কনের বাড়ির একজন আমায় প্রাতরাশ দিয়ে যায়। আমি একটা চেয়ার টেনে খেতে বসে যাই। ঠিক সেই সময়ে মাথার পেছনে কেউ চাঁটি মারে।

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি পরী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। চোখ মুখ ধুয়ে একদম তরতাজা দেখাচ্ছে ওকে, চেহারায় ক্লান্তির নাম গন্ধ নেই। যেন শিশিরের বারীধারে সদ্যস্নাত এক পদ্মফুল আমার সন্মুখে দণ্ডায়মান। ঠোঁটে লেগে আছে সুর ঝঙ্কারের ন্যায় এক মিষ্টি হাসি, চোখে সেই দুষ্টুমির ছাপ।

“আমাকে না দিয়েই খেতে বসে গেলে?” একটু যেন বকে দিল আমাকে।

“আমি কি করে জানবো তুমি কোথায়? তোমার তো দেখা নেই।”

“কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারতে তুমি। সেটা না করে দিব্যি একা একা খেয়ে নিলে।”

“ঠিক আছে বকাবকি না করে আমার সাথে খেতে বসে যাও।”

খাওয়ার পাট চুকিয়ে দিয়ে, পরী আবার বাড়ির মধ্যে ঢুকে পরে। কনে বিদায়ের ক্ষণ নিকটে আসছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের সব থেকে হৃদয় বিদারক ক্ষণ। বাড়ির সবার চোখে জল। আমি ঘড়ি দেখলাম, দশটা বাজে, কান্নাকাটি কনে বিদায়, হতে আর ঘন্টা দু’য়েক লেগে যাবে। কিছুক্ষণ পরেই নববিবাহিতা বধু তার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে, নতুন জীবনে পা রাখবে। তার নতুন সংসার অপেক্ষা করছে। সাথে সাথে কান্নার রোল জাগে বাড়ির লোকেদের মধ্যে। আমি এক কোনায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।

এমন সময়, আমার বাঁ হাতে কেউ চাপ দেয়। ঘুরে তাকিয়ে দেখি, পরী আমার বাঁ হাত চেপে ধরে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে। সুন্দর কালো চোখ দুটি টলমল করছে, আমার হাত দু’হাতে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে নিজের অশ্রু সংবরণ করতে প্রানপন প্রয়াস করে চলেছে। আমার কাঁধের পেছনে ঘন ঘন নাক ঘসে চলে, আমি ওর ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ শুনতে পাই।

আমি ওকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করি “কাঁদছ কেন? তোমার নতুন বউদি তো তোমার বাড়িতেই যাচ্ছে।”

চোখ মুছে আমার কানে কানে বলে “মেয়েদের দুঃখ তুমি বুঝবে না অভি।” আমি ওকে বাঁ হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি স্বান্তনা দেওয়ার জন্য। ওর গায়ে আমার শাল জড়ানো, সেটা কাছছাড়া করেনি পরী।

দু খানা গাড়ি আমাদের বসিরহাট পৌঁছে দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে। পরী আমার কানে কানে বলল “আমি সুব্রতদা আর বউদির সাথে গাড়িতে ফিরব, তুমি অন্য গাড়িতে ফিরবে। আমরা একসাথে ফিরলে লোকে কিছু মনে করতে পারে।”

বুদ্ধিমতী রমণী, ভেবে দেখলাম যে ঠিক বলেছে ও। এই দিনের আলোয় যদি কেউ আমাদের একত্রে দেখে ফেলে তাহলে জটিল সমস্যার উদয় হবে। আমাদের দু’জনার সম্পর্ক যে বিতর্কিত।

ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বারো’টার সময়ে গাড়ি ছাড়ল। বাড়ি পৌঁছতে ঘন্টা তিন চার লাগবে। আমি গাড়ির সামনের সিটে বসে, পেছনের সিটে সুব্রত মামার দুই বন্ধু বসে। দু’জনে বেশ গল্প করছিল, আমি ওদের কথায় বিশেষ কান দিচ্ছিলাম না, চুপ করে বসে জানালার বাইরে দু’পাশের গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। এমন সময়ে কারুর এক’জনার মুখে শুচিস্মিতার নাম শুনে কান খাড়া হয়ে যায়।

এক’জন বলল “শুচিস্মিতা কাল রাতে কেমন যেন অন্য রকম ছিল?”

অপর জন “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস, আমিও সেটা দেখেছিলাম, কেমন যেন আনমনা ছিল রাতের বেলা। ওর মতন দুরন্ত চুলবুলি মেয়ে, যে কিনা এক সেকেন্ডের জন্য চুপ করে থাকতে পারেনা, সে কিনা চুপচাপ?”

“হ্যাঁ আমিও সেটাই ভাবছিলাম যে কি হল মেয়েটার।”

“আমি কি করে জানবো?”

ইতিমধ্যে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করে “তুমি উলুপিদির ছেলে?”

আমি মাথা নাড়িয়ে জবাব দেই “হ্যাঁ”, আমার বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, এই বুঝি ধরা পরে গেছি আমি, কেউ হয়তো আমাদের একসাথে দেখে ফেলেছে।

“তোমার মা আমাদের স্কুলের টিচার ছিলেন। খুব কড়া ম্যাডাম তোমার মা।”

আমি হেসে ফেলি “ভায়া, বাড়ি তেও মা সমান কড়া।” আমার কথা শুনে ওর দু’জনে হেসে ফেলে।

“তার মানে সুব্রত তোমার সম্পর্কের মামা হন?”

“হ্যাঁ। মা সুব্রত মামাদের চেয়ে অনেক বড়, অনেক বয়সের ডিফারেন্স।” আমি তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক বাবা কিছু দেখেনি ওরা না হলে কেলেংকারি কান্ড হয়ে যেত।

“তো শুচিস্মিতা তোমার দুর সম্পর্কের মাসি হন?”

মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম “হ্যাঁ”

ওদের মধ্যে এক’জন আমাকে সিগারেট অফার করে “তুমি নিশ্চয় কলেজে পড়, সিগারেট চলে তো? আরে লজ্জা পেয়ো না, আমরা তোমার দাদার মতন যদিও সুব্রতর বন্ধু তবুও আমাদের দাদা বলে ডেক কেননা আমাদের মধ্যে বয়সের সেরকম ডিফারেন্স নেই।”

আমি মাথা নেড়ে জানিয়ে দেই যে আমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

“আরে কি বলছ? আমি কাল রাতে রাস্তায় তোমাকে সিগারেট খেতে দেখেছি?”

আমি ভাবলাম, মেরেছে রে, আমাদের কি একসাথে দেখে ফেলেছে? আমি বললাম “আরে না না, আমি কাল রাতেই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।”

হেসে ফেলে দু’জনেই “কেন, বিয়ে বাড়িতে কাউকে মনে ধরেছে নাকি? কেউ তো নিশ্চয় বলেছে সিগারেট ছাড়তে।”

এক’জন আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি মদ্যপান করি কিনা, আমি জানিয়ে দিলাম যে সেটা মাই এখন ছাড়িনি। আমরা সবাই হেসে উঠলাম, আমি আর জানালাম যে ভদকা আর রাম আমার চলে। ওরা জানাল যে রাতের বেলায় একজনের বাড়িতে মদ্যপানের আয়োজন করা হয়েছে, আমাকে নিমন্ত্রন জানাল, আর জানাল যে সুব্রত আসবে। আমি মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলাম যে আমি যাবো ওদের পার্টিতে।

আমাদের কথাবার্তা এগিয়ে চলে ঠিক গাড়ির মতন। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে এক’জনের নাম সমীর অন্য জনের নাম মৃগাঙ্ক, দু’জনের বয়স আটাশ বছর। দু’জনেই সরকারি চাকুরিরত, দু’জনেই অবিবাহিত। কনের নাম মৈথিলী, কথায় কথায় জানতে পারলাম যে সুব্রত আর মৈথিলীর প্রেম বিবাহ, তবে দেখেশুনে দেওয়া হয়েছে। মৈথিলীর বয়স প্রায় শুচিস্মিতার মতন। দু’জনের দেখা হয়েছিল কোন এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে, সেই থেকে প্রেম। তারপরে বড়দা, মানে সুমন্ত মামা, মেয়ের বাড়ির সাথে কথা বলে বিয়ের ঠিকঠাক করেন।

আমি মনে মনে বললাম যে এই বিয়েতে আমি আমার স্বপ্নের রমণীকে খুঁজে পেয়েছি, আমার হৃদয়সঙ্গিনী, পরী।

সত্য উদ্ঘাটন

বিকেল চারটে নাগাদ আমরা বাড়ি পৌঁছে যাই। নব দম্পতি কে বরণ করে নেওয়ার জন্য বাড়ির দরজায় সবাই উপস্থিত। মা, মায়ের মাসি(পরীর মা), মেঘনা মামি, বড়মামি আর অনেকে। আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম যে পরী বেশ হাসি খুশী, বেশ কথা বলছে মৈথিলীর সাথে। আমি বড় আশা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি একটু কৃপা দৃষ্টি বরিষণ করে এই কপদরক হীন পানের দিকে। হায় আমার ভাগ্য, তাকায় না যে পরী। আমি চুপ করে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি বধু বরণ অনুষ্ঠান। আমি পেছনে দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন, বাবা আমাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে রাতে কোন কষ্ট হয়নি তো, আমি উত্তর দিলাম যে, না, সব কিছু ব্যাবস্থা ঠিকঠাক ছিল।

বরণ শেষে মৈথিলী কে নিয়ে ঘরে ঢোকার আগে আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে পরী, তারপরে চোখে একটা মিষ্টি হাসি মাখিয়ে ঢুকে পরে ঘরের মধ্যে।
মৃগাঙ্ক পাশেই ছিল দাঁড়িয়ে, আমাকে ডেকে বলল যে পাশেই ওদের বাড়ি, আমি যেন হাত মুখ ধুয়ে ওদের বাড়ি যাই। আমি জানিয়ে দিলাম যে ঠিক আছে আমি ফ্রেস হয়ে ওদের বাড়ি পৌঁছে যাব।

বাড়ির মধ্যে ঢুকতে না ঢুকতেই মা আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি শাল টার কি করেছি? আমি বললাম যে পরীর ঠাণ্ডা লাগছিল তাই আমি ওকে শাল দিয়ে দিয়েছি। মা বললেন ভালো করেছিস।

আমি জামা কাপড় ছাড়ার জন্য বাথরুমে ঢুকতে যাবো এমন সময় দেখি পরী আমাদের রুমে এসে হাজির। পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে চলেছে। মা ওর দিকে তাকিয়ে দেখল যে ও এখন নিজের জামা কাপড় বদলায়নি, মৃদু বকা খেল তার জন্য মায়ের কাছে। পরী মাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার মা ওর মায়ের সাথে ওর পড়াশুনার ব্যাপারে কথা বলেছে কি না। মা জানিয়ে দিলেন যে আজ রাতে সব কিছু মিটে যাবার পড়ে মা এই নিয়ে কথা বলবেন সবার সাথে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে বলে “তুমি আমার সোনা দিদি। আজ থেকে তোমাকে ছোটোমা বলে ডাকব।”

মায়ের গলা ধরে আসে, অঞ্জলি দেওয়ার মতন, দু’হাতে পরীর মুখখানি নিয়ে ভেজা গলায় বলে “তুই তো আমার চোখের মণি রে। আয় আমার পাশে বস, তোকে একটু প্রান ভরে দেখি, কত দিন দেখিনি।”

আমি চেয়ে দেখলাম যে আমার সব থেকে ভালোবাসার দুই নারীর মধ্যে স্নেহ যেন উপচে পড়ছে।

মা আমার দিকে তাকিয়ে বলে “মা মেয়ের কথা হচ্ছে, তুই কি দেখছিস?”

আমি জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢোকার আগে এক বার খাটের ওপরে দেখলাম। মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরী, মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর স্নেহ ভরা নয়নে ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।

আমি হাত মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে দেখি, যে পরী মায়ের কোলে মাথা গুঁজে কাঁদছে আর মায়ের চোখে জল। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কি হয়েছে তোমাদের। আমাকে মা বললেন ওদের কে একলা ছেড়ে দিতে।

ঠিক সেই সময়ে, কামরার বাইরে থেকে মৃগাঙ্ক আমাকে ডাক দিল। আমি মা আর পরী কে ছেড়ে মৃগাঙ্কর সাথে ওদের বাড়ির দিকে রওনা হয়ে গেলাম। সারাটা রাস্তা আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে এক বিশাল প্রশ্ন, এমন কি কথা হল যে মা পরী দু’জনের চোখে জল। আমি ভেবে ভেবে কুলকিনারা খুঁজে পেলাম না।

মৃগাঙ্কর বাড়ি পৌঁছে দেখলাম যে সুব্রত আগে থেকে উপস্থিত। আমাকে দেখে সবাই বেশ নড়েচড়ে বসল। আমরা সবাই মিলে খাটে উঠে বসে পড়লাম। সমীর বারটেন্ডার, মদের বোতল আর গ্লাসের ভার ওর হাতেই। গ্লাস ভরে উঠলো, আমরা সবাই সুব্রতকে নতুন জীবনের অভিবাদন জানালাম, আমাদের মধ্যে ও এক’জন যার বিয়ে হয়েছে।

গল্প গুজবে সময় ধিরে ধরে কাটতে থাকে। কথাবার্তা বেশ জমে ওঠে, মেয়েদের প্রসংগ নিয়ে কথা ওঠে। সুব্রত আর মৃগাঙ্ক দু’জনের রক্তে লাগে মদিরার নেশা। শুধু মাত্র সমীর আর আমি একটু ঠিক ছিলাম।

হটাৎ করে মৃগাঙ্ক চেঁচিয়ে ওঠে “জানিস কি তোরা? শুচিস্মিতা কে আমার খুব ভালো লাগে।”

কথা শুনে আমার মনে হয় যেন কেউ সপাটে আমার কানে চড় মেরেছে। মাথা গরম হয়ে যায় আমার, হাতের গ্লাস হাতেই থেকে যায়, ঢোক গিলতে ভুলে যাই আমি।

সুব্রত বলে “তুমি তো বোকাচোদা, সারা জীবনে বলে উঠতে পারলে না।”

মৃগাঙ্ক নেশার ঘোরে বলে “শালা সব তোর বড়দার ভয়ে।”

সুব্রত “আমার বড়দা আমার বাবার মতন, একদম মাটির মানুষ। ঠিক যেন নারকেল, ওপরে কঠিন কিন্তু ভেতরটা বড় নরম স্বভাবের।”

মৃগাঙ্ক “ওকে, ঠিক আছে, তাহলে আজ আমি তোর বড়দার কাছে গিয়ে জানাব যে আমি শুচিস্মিতা কে বয়ে করতে চাই।”

আমার তখন মনে হচ্ছিল যে সপাটে টেনে এক চড় কসিয়ে দেই মৃগাঙ্কর গালে। কোন ক্রমে নিজেকে সামলে নিয়ে হাতের গ্লাস টা গলায় ঢালি।

সুব্রত আমাকে দেখিয়ে বলে “এই ছেলেটা, অভিমন্যু, এর কিছু বলার আছে? কি বলার নেই?”

আমার যেন মনে হল কেউ আমার মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। মদের নেশা ছুটে গেছে ঐ কথা শুনে, আমি কি ধরা পড়ে গেলাম তাহলে? কি বলতে চায়, কি বুঝাতে চায়? আমার সামনে রামের বোতল ছিল, দাঁত দিয়ে ছিপি টেনে খুলে নিট এক ঢোঁক গলায় ঢালি। গলা জ্বলতে শুরু করে দেয়, আমি বুঝতে পারছিলাম যে রাম আমার গলা দিয়ে নামছে।

আমি সুব্রত কে জিজ্ঞেস করলাম “কি বলার আছে আমার?”

“কি আবার, তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে কি না?” কথা শুনে আমার যেন ধরে প্রান ফিরে আসে, যাক বাবা, তাহলে আমার আর পরীর সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু জানেনা।

“কলেজে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নেই, সব শালা, বই পড়া মাগি।” আমার কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে।

এমন সময়ে আবার মৃগাঙ্ক চেঁচিয়ে ওঠে “আমি শুচিস্মিতা কেই বিয়ে করব।”

সুব্রত ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, দু’চোখে যেন আগুন ঝরে পড়ছে “বোকাচোদা অনেক হয়েছে। এখন আর ওসব ভেবে কাজ নেই। পরীর মাথার মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু একটা চলছে, সেই জন্য উলুপিদি, মানে ওর মাকে, আমার বিয়েতে নিমন্ত্রন করা হয়েছে।” তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে “আমি আঁচ করতে পারছি যে আজ রাতে অথবা কাল সকালে, বিশাল কিছু একটা নিয়ে ঝড় উঠবে বাড়িতে। ছোটোবেলার কথা আমার ঠিক ভাবে মনে নেই, তবে আমি শুনেছি যে ওর মা আমার বাবা মারা যাবার পড়ে আমাদের জন্যে অনেক কিছু করেছেন, বিশেষ করে পরীর জন্য। আমি শুনেছি যে সেই সময়ে উলুপিদি আমাদের সংসার টাকে নিজের সংসার হিসাবে চালিয়েছেন। আমাদের কাপড় কিনে দিয়েছেন, মুখের ভাত ও জুগিয়েছেন। আমি জানিনা ঠিক যে এর মাঝে কি ঘটনা ঘটেছে তবে এই টুকু বলতে পারি যে উলুপিদি যার জন্যে এসেছেন বা যা করতে এসেছেন সেটা আমাদের সবার জীবনে একটা বিশাল দাগ কেটে যাবে।”

সুব্রতর কথা শুনে আমার নেশার ঘোর কেটে যায়, আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে জল। সেই দেখে আমার চোখে জল চলে আসে। আমার হাত ধরে সুব্রত জিজ্ঞেস করে যে আমার মা কেন এসেছেন। আমি ভেবে পাইনা কি বলব, সত্যি কথাটা কি জানান উচিৎ? সবাই আমার দিকে তাকিয়ে, যেন এই প্রশ্নের উত্তর শুধু আমার কাছে আছে।

সুব্রত থামতে চায়না “আমাকে আজ বলতে দে। আমি জানি আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে কি হয়েছিল। আমার দুই দিদি, ইন্দ্রানিদি আর চন্দ্রানিদি, এই দু’দিদির জন্য উলুপিদির সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। আমার দিদি দের বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, সেই দেমাকে মাটিতে পা পড়েনা তাদের। অতীতে যারা তাদের সাহায্য করেছে তাদের ভুলে গেছে আমার দিদিরা। আর যাই হোক, উলুপিদি যে কারনেই হোক এসেছে, আমি সাথে আছি।”

আমি ভেবে দেখলাম যে, বলে দেওয়া ভালো “আমার মা পরীর জন্য এসেছেন। পরী এম.এস.সি পড়ে মায়ের মতন টিচার হতে চায়। কিন্তু তোমার ফ্যামিলির কাছ থেকে অব্জেক্সান আছে, বিশেষ করে ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি।”

সুব্রত আমার কাঁধে হাত রেখে বলল “কিছু ভেবনা, আজ আমি কথা বলব, পরী পড়াশুনা করবে। আজ আমি আমার দিদিদের কথা শুনব না।”

ঠিক সেই সময়ে দুষ্টু, সুমন্ত মামার ছেলে, দৌড়ে এসে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, বাড়িতে আমাদের ডাক পড়েছে, খাবার ঘরে কিছু একটা মিটিং বসেছে। কথা শুনে আমি আর সুব্রত মুখ চাওয়াচাওয়ি করি, দু’জনার নেশার ঘোর এক ধাক্কায় উড়ে গেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি গিয়ে ঢুকি।

খাবার ঘরে ঢোকা মাত্র দেখতে পেলাম যে বড়ির সবাই একত্রিত হয়ে বসে, বাবা, মা, তার পাশে দিদা (পরীর মা), তার পাশে ইন্দ্রানি মাসি, ইন্দ্রানি মাসির স্বামী, তার পাশে চন্দ্রানি মাসি, চন্দ্রানি মাসির স্বামী, শশাঙ্খ মামা, মেঘনা মামি, এবং সুমন্ত মামা। পরী মায়ের পেছনে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সুব্রত আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে যে সব কিছু ঠিক হবে। ইন্দ্রানি মাসি বললেন “দেখো উলুপিদি, আমাদের বাড়ির কোন মেয়েরা গ্রাজুয়েট নয়, তা সত্তেও আমরা পরীকে পড়িয়েছি। এখন ওর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, ওর বিয়ে করা উচিৎ। আমরা ওর ভালো চাই, একটা ভালো ছেলে দেখেই ওর বিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের দুই বোন কে দেখো, আমরা বিয়ে করে ঘর সংসার নিয়ে ভালো আছি।” মা বললেন যে “পরী যদি পড়াশুনা করতে চায় তাহলে ক্ষতি কি?”

ইন্দ্রানি মাসি তার কথায় অনড় “অত পড়াশুনা করে কি হবে? ওর বয়সে আমার বিয়ে হয়ে গেছিল।”

সুব্রত এতক্ষণ ধরে চুপ করে সব শুনছিল, ইন্দ্রানি মাসি কথা শুনে বলল “পরী পড়াশুনা করবে। উলুপিদি যা বলেছেন সেটা আমাদের মেনে নেওয়া উচিৎ।”

সবাই ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ইন্দ্রানি মাসি আর চন্দ্রানি মাসি হয়ত ভাবতে পারেনি যে সুব্রত এর মাঝে কথা বলবে।

শশাঙ্খ মামা সুব্রত কে বললেন যে “তুই চুপ কর, তোকে এখানে কেউ কথা বলতে বলেনি।”

চন্দ্রানি মাসি বলে উঠলো “তোর মতামত কি কেউ জিজ্ঞেস করেছে এখানে?”

সুব্রত “আমি এই পরিবারের একজন আমার বক্তব্য রাখার অধিকার আছে।”

ব্যাপারটা বেশ পেঁচিয়ে উঠেছে। আমি আড় চোখে পরীর দিকে তাকিয়ে দেখি, ওর চোখে জল। দিদা পরীর দিকে তাকিয়ে আছে, পরী মাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে, যেন মা ওর শেষ আশা ভরসা। দিদা সুমন্ত মামার দিকে তাকিয়ে মামার অভিমত জানতে চাইলেন।

সুমন্ত মামা বললেন “আমার মনে হয়, পরী পড়াশুনা চালিয়ে যাক। ইতিমধ্যে আমরা পরীর জন্য ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দেব যে কিনা ওকে পড়াশুনা করতে দেবে।”

পরী ধরা গলায় চেঁচিয়ে ওঠে “না আমি এখন বিয়ে করবো না। তোমরা সবাই চাও যে আমি এ বাড়ি থেকে চলে যাই?” মা পরীর হাতে হাত বুলিয়ে আসস্থ করে, শান্ত করতে চেষ্টা করে।

ইতিমধ্যে ইন্দ্রানি মাসি মাকে জিজ্ঞেস করেন “তুমি এতদিন পড়ে কেন এসেছ এখানে?”

দিদা ইন্দ্রানি মাসির কথা শুনে একটু রেগে গিয়ে বললেন “আমি শশাঙ্খ কে বলেছিলাম উলুপিকে নিমন্ত্রন করতে। উলুপির সাথে একদম উঁচু গলায় কথা বলবি না।”

ইন্দ্রানি মাসি দিদার কথা অমান্য করে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে “আমরা দু’বোনে আমাদের পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছি। তুমি কি করেছ? কোথায় ছিলে সতের বছর?”
কথাটা বলার পরে মনে হল যেন কেউ অ্যাটম বম্ব ফেলেছে ঘরে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, সবাই চুপ করে বসে আছে, শুধু পরীর ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ ছাড়া আড় কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছেনা।

আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, রাগে লাল হয়ে গেছে মায়ের দু’চোখ, জলে ভরে এসেছে। ধরা গলা অথচ বেশ গম্ভির স্বরে মা বললেন “ভুলেও আমাকে জিজ্ঞেস করতে যাস না আমি কি করেছি। আমি এখানে শুধুমাত্র পরীর জন্য এসেছি। আমি ওর জন্যে যা করব সেটা তোদের সবাই কে মেনে নিতে হবে। জানতে চাস আমি কি করেছি?” সবাই মায়ের দিকে তাকিয়ে, দিদা মাকে চুপ করতে অনুরোধ করেন।

দিদা “আমি বলছি পরী পড়াশুনা করবে, তুমি চুপ কর উলুপি দোহাই।”

মা থামার পাত্রি নন “না, আজকে আমাকে বলতে দাও। ওরা কারন জানতে চেয়েছে, ভুলে গেছে ওরা” তারপরে ইন্দ্রানি মাসি আড় চন্দ্রানি মাসির দিকে তাকিয়ে বললেন “তোরা সবাই অনেক ছোটো যখন তোদের বাবা মারা যান। পরী শুধু দেড় বছরের, আমার ছেলে তখন আমার পেটে। তোরা সবাই তখন অনেক ছোটো ছিলিস, তোদের দেখার কেউ ছিলনা। মাসিমা শুধু কাঁদতেন, এই শশাঙ্খ পড়াশুনা ছেড়ে ধানকলে কাজ করে, যাতে তোদের পেটে দুটো ভাত জোটে। সেই পাঁচ বছর আমি দিয়েছি এই সংসারে, আমার আয় আমার সব কিছু। তোদের খাওয়া দাওয়া, তোদের জামা কাপড় সব কিছু, যার জন্যে তোরা সবাই আজ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস। এরপরে তুই আমাকে জিজ্ঞেস করিস আমি কি করেছি?”

দিদা মাকে শান্ত করার প্রবল চেষ্টা করেন। পরী জলভরা চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। গাল বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে চলেছে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, সবাই চুপ। আমি আর সুব্রত মুখ চাওয়াচায়ি করি।

মা থামেন না বলে চলেন “বুকের দুধ খাইয়ে বড় করেছি পরীকে। ওকে তো তোরা ফেলনা করে দিয়েছিলিস, ওর জন্ম হবার পরে যে মেসো মারা গেছিলেন তাই পরী কে তোরা অলুক্ষুনে বলতিস। ওর কি দোষ ছিল? আমি এই বুক কেটে আমার ছেলের সাথে ওকে দেখেছি।”

সুব্রত মায়ের পায়ের কাছে গিয়ে বসে পরে। সবার চোখে জল। এর মধ্যে দেখলাম যে বাবা উঠে চলে গেলেন নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য। মা আবার বলতে শুরু করেন “এই বুক চিরে যদি দেখাতে পারতাম তাহলে দেখিয়ে দিতাম, ও আমার কে। আমার মেয়ে নেই। পরী আমার মেয়ে নয় তবে আমার মেয়ের মতন। আমি এখানে তোদের কারুর জন্য আসিনি, তোদের অনেক বড় বড় বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, দুজনেই ব্যাবসা করে, অনেক টাকা পয়সা তোদের। দেমাকে এখন তোদের মাটিতে পা পড়েনা।”

দিদা আর পরী দু’জনে কেঁদে চলেছে, সব কিছু জানার পরে আর দেখার পরে আমার চোখে জল এসে যায়।

“কাল, বউভাত শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, আমি পরীকে নিয়ে কোলকাতা চলে যাবো। ক্যাল্ক্যাটা উনিভারসিটি তে আমি পড়াব ওকে, যা টাকা লাগে আমি দেব। তোরা কি ভাবিস কি করিস আমি কোনদিন দেখতে যাবনা।”

মায়ের বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়, পরী মায়ের পায়ের কাছে বসে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করে দেয়। পুরো ঘরের পরিবেশটা বদলে যায় এক উত্তেজনাপূর্বক ঘটনা বলিতে, সবাই চুপ করে বসে আছে, কারুর মুখে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত নেই।

অবশেষ সুমন্ত মামা বলে ওঠেন “আমি উলুপিদি কে সমর্থন করি। দিদির ন্যায্য অধিকার আছে পরী কে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাবার। আমরা সবাই ভুলে গেছিলাম যে উলুপিদি এক সময় আমাদের জন্য কি করেছেন।”

তারপরে যা বললেন সেটা শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল “কাল বাদে পরশু, বিয়ের সব কিছু মিটে যাবার পরে, আমি এই সম্পতির সাত ভাগ করবো।”

ইন্দ্রানি মাসি প্রশ্ন করেন “সাত ভাগ কেন? আমরা তো ছয় ভাই বোন।”

গর্জে ওঠেন সুমন্ত মামা “তুই চুপ করে বসে থাক। এক ভাগ মায়ের আড় বাকি ছয় ভাগ আমাদের। মায়ের ভাগ মা যাকে চাইবেন তাকে দিয়ে যাবেন।” শশাঙ্খ মামা সেই কথায় সায় দিলেন।
“এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা, তর্ক বিতর্ক হল। এই কথা যেন এই চার দেওয়ালের মধ্যে থাকে। আমি চাইনা সুব্রতর বিয়ের আনন্দ মাঠে মারা যাক। আজ এখানেই কথা শেষ, সবাই নিজের কাজে চলে যাও।”

আমি ঘড়ির দিকে দেখি, রাত প্রায় ন’টা বাজে।

শুভরাত্রির চুম্বন

সুব্রত আর আমি উঠে দাঁড়ালাম। দুই মাসি তাদের স্বামীদের নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। ঘরের মধ্যে শুধু তিন জন বসে। পরী, দিদা আর মা। পরীর চোখে জল, মুখে আবার হাসি ফুটে উঠেছে। মাকে জড়িয়ে ধরে কোলের ওপরে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে চুপ করে। আমি ওর মুখে হাসি দেখে বেশ খুশী হলাম, সেই সাথে এটা জেনে আনন্দিত হলাম যে পরী এবার থেকে আমাদের বাড়িতে থাকবে, আমার কাছে আমার পাশে।

আমার দিকে তাকিয়ে সুব্রত বলল “এই সব দেখে আমার খুব গলায় ঢালতে ইচ্ছে করছে।” ঘর থেকে আমি আর সুব্রত বেড়িয়ে ছাদে চলে এলাম। আগে থেকে ছাদে সমীর আর মৃগাঙ্ক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। দুজনেই আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করল যে কি হয়েছে।

সুব্রত আমার পিঠ চাপড়ে বলল “উলুপিদি সত্যি ভগবান।” ছাদে বসে গ্লাসে ভদকা নিয়ে সুব্রত পুরো ঘটনাটা ওদের শুনাল। আমি এত সব আগে জানতাম না।

কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের ডাক পরে খেতে যাওয়ার জন্য। নিচে নেমে দেখি সবার মুখে কেমন একটা থমথমে ভাব। সবাই এত বড় একটি ঘটনার পরে কেমন যেন হয়ে গেছে। সবাই নিজেদের মনভাব লুকিয়ে রেখে হেসে সব কিছু ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সারা বাড়ির আবহাওয়া ক্রমে রঙ বদলাতে লাগলো, সবকিছু পুনরায় স্বাভাবিক হতে লাগলো।

পরী বা মায়ের কোথাও দেখা পাইনা, আমি মেঘনা মামি কে জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিলেন যে মা আর পরী দু’তলায় নতুন বউ, মৈথিলীর ঘরে গল্প করছে। কথা শুনে আমি সুব্রতর দিকে তাকালাম।

সুব্রত আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল “ধুর ও সব মেয়েলি ব্যাপার স্যাপার, নাক গলিয়ে কি হবে। খেয়ে দেয়ে চল শুয়ে পরি।”

এমন সময়ে দেখলাম যে ইন্দ্রানি মাসি আমার দিকে এসে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন “অভিমন্যু আজ সন্ধ্যেবেলায় যা কিছু ঘটে গেছে তার জন্য আমি অতন্ত দুঃখিত। আমি যা যা বলেছি তার জন্য আমি অতন্ত দুঃখিত। তোমার মাকে বল পারলে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়।”

সুব্রত হেসে বলল “দিদি আমার মনে হয় তুই নিজে গিয়ে একবার কথা বল। উলুপিদি এত ভালো মানুষ, নিশ্চয় তোর কথা শুনে মাফ করে দেবেন।”

আমি মাসি কে বাবার কথা জিজ্ঞেস করাতে, জানালেন যে, বাবা যে হেতু বয়স্ক এবং বাড়ির সন্মানিয় ব্যাক্তি তাই বাবা খেয়ে দেয়ে ওপরের এক ঘরে শুয়ে পড়েছেন।

আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন যে ওনার সাথে খেতে বসেত। তার কথা আর অমান্য করি কি করে। ডাইনিং টেবিলে খেতে বসতে যাবো, এমন সময়ে সবার চোখ সিঁড়ির দিকে গেল। চেয়ে দেখলাম, পরী আর মা, নব বধু, মৈথিলী কে সাথে করে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।

লাল সাড়ীতে নববধু, মৈথিলী কে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি তুলনা করার প্রচেষ্টা করলাম, কে বেশি সুন্দরী, মৈথিলী না পরী। পরী অবশ্যই বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে, গাড় নীল রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে, ফর্সা গায়ের রঙে বেশ মানিয়েছে কামিজের রঙটা। মনে মনে ভাবলাম, উফ, অনেকক্ষণ পরে দেখা দিলে, হে প্রান প্রিয়ে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। মাথার চুল ছাড়া, ঢেউ খেলে নেমে গেছে কোমর পর্যন্ত। চোখে মুখে সেই উজ্জ্বল প্রদিপ্ত ভাব ফুটে উঠেছে আবার।

আমার ডান পাশে সুব্রত বসে ছিল, কাঁধ চাপড়ে কানে কানে বললাম যে “গুরু, বেড়ে প্রেমে করেছ তুমি। মৈথিলী সত্যি খুব সুন্দরী দেখতে।”

আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে “অয়ে ব্যাটা, ও তোমার মামি হয়। ওর দিকে দেখা বারন।”

আমার দুজনে হেসে ফেলি। আমি বললাম “তুমি আবার মামা হলে কখন থেকে, সারা বিকেল তো সাথে মিলে গলায় ঢাললাম।”

আমি ভুলে গেছিলাম যে ইন্দ্রানি মাসি আমার বাঁ দিকে বসে। আমার কান ধরে, কটমট করে তাকিয়ে বললেন “কি? তোরা ছাদে বসে মদ গলায় ঢাল ছিলিস?”

“আরে না না, মাসি, আমরা কফি খাচ্ছিলাম।”

হেসে বললেন আমাকে “হুম, আমার নাক কুকুরের মতন বুঝলি।”

মা মৈথিলী কে নিয়ে টেবিলে বসে। মায়ের সামনে ইন্দ্রানি মাসি বসে, আমার উলটো দিকে পরী আর তার পাশে মৈথিলী, সুব্রতর উলটো দিকে বসে। পরী যতবার করে সামনে ঝোঁকে তত বার করে কামিজের ওপর থেকে ওর গভীর বুকের খাঁজ আমার চোখের সামনে বেড়িয়ে পরে। কোমল বক্ষ মাঝে সুগভির খাঁজ দেখে আমি হাঁ হয়ে যাই। খাবার ঘরের আলো যেন ওর মসৃণ ত্বকের ওপরে পিছলে পরে।

মা সুব্রতর দিকে তাকিয়ে বললেন “তোরা দুজনে আজ রাতে একসাথে শুতে পারবি না।”
খাওয়া শুরু হতেই আমার পায়ে কেউ সুড়সুড়ি দিতে শুরু করে, আমি ঠিক জানতাম যে এটা পরীর কাজ। আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের লম্বা নখ দিয়ে, টেবিলের নিচে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে আর হেসে চলেছে। আমার সারা শরীরে এক শিহরণ খেলে বেড়ায়। একবারে হাঁটুর থেকে পায়ের গোড়ালি অবধি নখ দিয়ে আঁচড় কাটে মেয়েটা। আমি প্রানপনে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করি। মুখে কিছু বোঝাতে চাইনা যে টেবিলের নিচে কি খেলা চলছে।

সুব্রত এমন সময়ে মজা করে বলে উঠল “কাল অভিমন্যু কে ধুতি পাঞ্জাবীতে যা দারুন দেখতে লাগছিল যে আমার হিংসে হচ্ছিল ওকে দেখে। আমি তো এক সময়ে ভাবলাম মৈথিলী আমার গলায় মালা না দিয়ে হয়তো ওর গলায় মালা দিয়ে দিলো।”

কথা শুনে মৈথিলী লজ্জায় লাল হয়ে গেল, চারপাশে বাড়ির লোকজন, তার মধ্যে এই রকম ভাবে কেউ বললে সত্যি লজ্জায় পরে যেতে হয় নতুন বউকে। মৈথিলী মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার অবস্থা তথৈবচ।

এর মাঝে পরী হেসে বলে “বউদি, আর দেখে লাভ নেই, কাল রাত পর্যন্ত তোমার কাছে সময় ছিল।”

কথায় আর গল্পে মেতে ওঠে খাওয়ার টেবিলে, আমরা সবাই বেশ মজা করে খেয়ে দেয়ে উঠে পরি। খাওয়া শেষ হতে না হতে, ইন্দ্রানি মাসি মায়ের কাছে এসে, মায়ের হাত ধরে একটি ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। আমি বুঝে গেলাম যে আর এক চোট কান্না শুরু হবে, অবশ্য এখন যা হবে সেটা মান অভিমানের খেলা। হা ভগবান, চারদিকে কি যে হচ্ছে, এবারে তো অভিমান ভাঙানোর খেলা শুরু হবে আর বাঙালি মেয়েদের চোখে যেন এক একটা গঙ্গা নদী আছে।

আমি বাথরুমে ঢুকে হাত ধুচ্ছিলাম, এমন সময়ে পরী বাথরুমে ঢুকে আমার কানে কানে বলে যে আধ ঘন্টা পরে ছাদে ওর সাথে দেখা করতে। আমি একবার চারদিকে তাকিয়ে দেখে নেই যে কেউ আমাদের দেখছে কিনা। না, কেউ আমাদের দেখছে না। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে বাঁ হাথ ওর ঘাড়ের পেছনে দিয়ে ওর মুখ আমার দিকে টেনে আনি। হটাৎ করে টানার ফলে, পরী হকচকিয়ে যায়। দু’হাত আমার বুকের ওপরে দিয়ে আমাকে ঠেলার চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ানর জন্য। আমি বাঁ হাত দিয়ে ওর ঘাড় শক্ত করে ধরে থাকি আর ডান হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে আরও নিবিড় করে টেনে নেই আমার ওপরে।

আমি ওর সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে মিনতি করে বলি “প্লিস, একটা কিস। দেখ অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে কাছে পাইনি। প্লিস খালি একটা, ব্যাস। আমি তোমার গন্ধ পাইনি অনেকক্ষণ ধরে।”

পরী মৃদু স্বরে চিৎকার করে ওঠে “করছ টা কি? ছাড়ো আমাকে, কেউ এসে যাবে।”

“একটা ছোট্ট কিস, ব্যাস আর কিছু না।”

মাথা নাড়িয়ে বলে “না না, এখন নয়। ছাদে ওয়েট করো।”

আমি মিনতি করি “শুধু একখানা, ছোট্ট করে। আধ ঘন্টা তো কাটাতে হবে, তার খোরাক দিয়ে যাও”

হেসে বলে “তুমি না, একদম অবাধ্য, বেয়াড়া ছেলে। সবুর করো, সবুরে ফল মধুময় হয়, সোনা।”

আমি কোমর জড়িয়ে ধরি আরও নিবিড় করে কাছে টেনে নেই, আমাদের শরীরের মাঝে একটি সুত যাওয়ার জায়গা থাকে না, ও দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। আমার প্রসস্থ বুকের ওপরে ওর কোমল বক্ষদ্বয় পিষে সমান হয়ে যায়। নারীর কোমল বক্ষ স্পর্শে আমার শরীরের সহস্র রোমকূপে আগুন ধরে যায়। আমার বুকের ওপরে আমি ওর হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি অনুভব করি। ক্রমে ওর বুকের ধুকপুকানি তীব্র থেকে তিব্রতর হয়ে ওঠে। দুই চোখ যেন দুই পদ্মফুল, চোখের পাতা যেন পদ্মের পাপড়ি, কাজল আঁকা ভুরু যেন ধনুকের মতন বাঁকা। গভীর কালো চোখে আমার দিকে আবেগ নিয়ে তাকিয়ে থাকে, ঐ দু’চোখের চাহনি মাঝে আমি হারিয়ে যাই। প্রগাড় বাহুবন্ধনী মাঝে আমরা দু’জনে সারা পৃথিবী ভুলে একে ওপরের মাঝে হারিয়ে যাই। আলিঙ্গনকে আর নিবিড় করে নেই। আমার নাকের ওপরে আলতো করে নাকের ডগা ঘষে দেয়। আসন্ন, প্রগার চুম্বনের অধীর অপেক্ষায় ঠোঁট দুটি কাঁপতে থাকে যেন দখিনা বাতাসে অম্রপল্লব কাঁপছে। আমার সারা মুখে পরীর উষ্ণ প্রশ্বাস ঢেউ খেলে বেড়ায়।

পরীর ঠোঁট দুটি অল্প ফাঁক করা, যেন আমায় ডাকছে, “এত দেরি লাগে নাকি চুমু খেতে?”

ঠিক সেই সময়ে মেঘনা মামি ডাক দেয় পরীকে “পরী, কোথায় তুই?”

মনে হল যেন আমাদের ওপরে বজ্রপাত হয়েছে, ছিটকে আলঙ্গন মুক্ত হয়ে পড়ি আমরা। আমার বাহুবন্ধনী থেকে ছাড়া পেয়ে আমার দিকে আলতো করে হেরে যাওয়ার হাসি হাসে। ভগ্ন হৃদয়ে, দুঃখিত মনে আমাকে ছেড়ে দিতে হয় পরীর কোমর। পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে যায় আর বের হবার আগে আমার হাতে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে চলে যায়। আমি হাতের মুঠি খুলে দেখি একটা সিল্কের সাদা মেয়েলি রুমাল।

ফিসফিস করে বলে আমায় “যতক্ষণ না আমি আসছি, ততক্ষণ আমার গন্ধ নিয়ে থাক।” তারপরে মেঘনা মামির উদেশ্যে চেঁচিয়ে ওঠে “হ্যাঁ কি হল, কেন খুঁজছ আমায়?”

ওর পেছন পেছন আমি বেড়িয়ে পড়ি বাথরুম থেকে, আমাদের দু’জনকে একসাথে বের হতে দেখে আমাদের দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেঘনা মামি।

পরী বলে “কি দেখছ তুমি ওরকম ভাবে? আমরা তো শুধু হাত ধুতে গেছিলাম।”

মেঘনা মামি জানাল যে, পরীকে আজ মৈথিলীর সাথে শুতে হবে সেজন্যে মৈথিলী কে নিয়ে ওর ঘরে যেতে। দুই সুন্দরী মহিলা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চড়ে, আমি পেছন থেকে দেখি। চড়ার সময়ে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে চোখ টিপে ইশারা করে বলে, ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা কর। সবার নজর এড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেই যে আমি থাকব। ওপরে চড়ার সময়ে, পেছন হতে সুন্দরী রমণীর

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.